মন্দাকিনী, যিনি আশির দশকের শেষদিকে রাজ কাপুর পরিচালিত বলিউডের সুপারহিট ছবি ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন, সম্প্রতি তার অভিনীত একটি বিতর্কিত দৃশ্য নিয়ে মুখ খুলেছেন। এই সিনেমার একটি দৃশ্যে তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল, যা সেই সময়ে বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। এখন, মন্দাকিনী বলছেন যে, সেই দৃশ্যের প্রকৃতি নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এবং এটি আসলে তেমন কিছুই নয়, বরং একটি পবিত্র দৃশ্য।
সিনেমার সেই দৃশ্যটিতে মন্দাকিনীকে একটি ট্রেনে শিশু কোলের কাছে নিয়ে স্তন্যপান করাতে দেখা যায়। ১৯৮০ এর দশকে বলিউডের সিনেমার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সিনেম্যাটিক সংযমের প্রেক্ষাপটে, এই দৃশ্যটি সেসময়ের দর্শকদের জন্য নতুন এবং সাহসী ছিল। মন্দাকিনী এই দৃশ্যটির প্রসঙ্গে বলেছেন যে, এটি নিছকই একটি অভিনয় ছিল এবং বাস্তবে এমন কিছু ঘটেনি। তিনি বলেন, "দৃশ্যে অনেক খানি উন্মুক্ত বক্ষবিভাজিকা দেখানো হলেও সেটাও টেকনিক্যালি তৈরি করা। আমাদের তো ওই দৃশ্য নিয়ে কথা বলাও উচিত নয়। ওটা খুব পবিত্র একটা দৃশ্য, আজকাল তো সবকিছুতেই যৌনতা থাকে।"
মন্দাকিনী আরও বলেন যে, তখনকার সময়ে এই ধরনের দৃশ্য চলচ্চিত্রে খুব একটা দেখা যেত না এবং এটি দর্শকদের মধ্যে কিছুটা শক তৈরি করেছিল। তবে, আজকের দিনে যেভাবে সিনেমায় যৌনতা এবং নগ্নতা দেখানো হয়, তার তুলনায় এটি কিছুই নয়। মন্দাকিনী বিশ্বাস করেন যে, সেই দৃশ্যের মধ্যে কোনও অশালীনতা ছিল না এবং এটি একটি শিশুর মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পাওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত।
এই বিতর্কিত দৃশ্য নিয়ে মন্দাকিনী বলেন, “এটি ছিল একটি স্তন্যপান দৃশ্য, এবং এটি একটি মায়ের এবং তার সন্তানের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক বন্ধনের উদাহরণ। এতে কোনরকম অশ্লীলতা ছিল না এবং এটি নিয়ে এত বিতর্ক হওয়া উচিত ছিল না।” তিনি আরও যোগ করেন যে, এই ধরনের দৃশ্য সমাজের সঠিক উপলব্ধি এবং ভাবনার উপর নির্ভর করে এবং সময়ের সাথে সাথে মানুষ এ ধরনের দৃশ্যকে আরও গ্রহণযোগ্যভাবে দেখতে শুরু করেছে।
এই বিতর্কের প্রসঙ্গে মন্দাকিনী আরও একটি দিক উন্মোচন করেন। অভিনেত্রী পদ্মিনী কোলহাপুরী একবার দাবি করেছিলেন যে, 'রাম তেরি গঙ্গা মইলি'র শুটিংয়ের ৪৫ দিন পর রাজ কাপুর মন্দাকিনীর বদলে নায়িকা হিসেবে তাকে নিতে চেয়েছিলেন। মন্দাকিনী এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, "আমি সত্যিই জানি না পদ্মিনী কোলহাপুরীকে এই চরিত্র অফার করা হয়েছিল কিনা। তবে ওই চরিত্রটার প্রতি অনেকের নজর ছিল, কিন্তু রাজ কাপুর আমাকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ ওঁনার একটা নতুন মুখ প্রয়োজন ছিল।"
মন্দাকিনীর এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, সেই সময়ে মন্দাকিনীকে অভিনয়ের জন্য বেছে নেওয়া রাজ কাপুরের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল, যা পরবর্তীতে সিনেমার সফলতায় অবদান রাখে। ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবিটি বলিউডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে, এবং মন্দাকিনীর এই দৃশ্যটি সেই সময়ের দর্শকদের জন্য একটি সাহসী প্রদর্শনী ছিল।
মন্দাকিনীর এই সাহসী ভূমিকা এবং তার প্রকৃতির প্রতি আস্থা প্রদর্শন করার জন্য তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়াও, মন্দাকিনীর এই বক্তব্য সমাজের পরিবর্তনশীল মানসিকতা এবং চলচ্চিত্রের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রতিফলন বলে মনে করা যেতে পারে।
এই সাক্ষাৎকারে মন্দাকিনী আরও বলেন যে, বলিউডে তার ক্যারিয়ার শুরু করার সময় তিনি কেবল ১৬ বছর বয়সী ছিলেন। ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবিতে অভিনয়ের পর তিনি আরও বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন, তবে এই ছবির পর আর তেমনভাবে বলিউডে দেখা যায়নি তাকে। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জোরদার’ ছিল মন্দাকিনীর শেষ ছবি, এরপর তিনি সিনেমা জগৎ থেকে অবসর নেন।
মন্দাকিনী ২৬ বছরের বিরতির পর সম্প্রতি আবারও শোবিজ জগতে ফিরে এসেছেন। এই ফিরে আসার অংশ হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো একটি সিঙ্গল গান ‘মা ও মা’ প্রকাশ করেছেন, যেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন তার পুত্র রব্বিল ঠাকুর।
মন্দাকিনীর এই ফিরে আসা তার ভক্তদের জন্য একটি আনন্দের খবর এবং তারা তাকে আবারও পর্দায় দেখতে উচ্ছ্বসিত। তার এই নতুন গানের মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজন্মের দর্শকদের সাথে আবারও সংযোগ স্থাপন করছেন।
মন্দাকিনীর এই সাহসী বক্তব্য এবং তার স্বচ্ছতা সমাজের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একজন মায়ের এবং তার সন্তানের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র এবং এটি নিয়ে কোনওরকম নেগেটিভতা ছড়ানো উচিত নয়। মন্দাকিনীর এই বক্তব্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যে, একজন অভিনেত্রী কিভাবে তার কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সৎ এবং সাহসী হতে পারে।